আজ ১৩ই ডিসেম্বর উল্লাপাড়া পাক হানাদার মুক্ত দিবস। আজকের এই দিনে ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী যুদ্ধে নিশ্চিত পরাজয় জেনে উল্লাপাড়া ত্যাগ করেন। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর আমরা ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর কাঙ্ক্ষিত বিজয় অর্জন করি। এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহিদ হন এবং দু-লক্ষ মা -বোন তাদের সম্ভ্রম হারান।

মুক্তিযুদ্ধের সময় উল্লাপাড়াতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন পলাশ ডাঙ্গা যুবশিবিরের মুক্তিযোদ্ধারা। এই বাহিনীর সবাই ছিলেন সংঘবদ্ধ, শৃঙ্খলাবদ্ধ একটি মিনি ক্যান্টনমেন্ট। পলাশডাঙ্গা যুব শিবির হানাদার পাক বাহিনীদের সাথে বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধ করে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- কামারখন্দ থানার ভদ্রঘাট, ঝাঐল ব্রিজ, রায়গঞ্জ থানার ব্রহ্মগাছা, সিরাজগঞ্জ সদর থানার হরিপুর ব্রিজ, উল্লাপাড়া মার্চেন্টস্ পাইলট স্কুল পাকসেনা ক্যাম্প, তাড়াশ থানার নওগাঁ, দিলপাশার ব্রিজ, পূর্বদেলুয়া ব্রিজ এবং ঘাটিনা ব্রিজে প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

এছাড়াও এ বাহিনী বেশকিছু রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সিরাজগঞ্জ মহকুমার পাকিস্তানের হাট (বর্তমান বাংলা বাজার), ভানুদহ, মেঘাই, রতনকান্দি, শিয়ালকোল, ছোনগাছা, কালিদাসগাঁতী, ঘোড়াচড়া, কাশিয়াহাট্রা, সায়েদাবাদ, ছাগলা পাগলা ব্রিজ, শ্যামপুর ব্রিজ, বোয়ালিয়া ব্রিজ, পূর্বদেলুয়া ব্রিজ, দহকুলা ব্রিজ, চৌকিদহ ব্রিজ, রাজমান, সলঙ্গা বাজার, সমেসপুর, কৈজুরি, শরৎনগর।

সিরাজগঞ্জ জেলায় সর্বপ্রথম মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয় উল্লপাড়া উপজেলার অন্তর্গত ‘ঘাটিনা রেলওয়ে সেতুতে।’
১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সিরাজগঞ্জের তদানীন্তন মহকুমা প্রশাসক এ কে শামসুদ্দিন ও উল্লাপাড়ার তদানীন্তন ছাত্রনেতা আব্দুল লতিফ মির্জার নেতৃত্বে প্রায় ৩ ঘন্টাব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধে ১৫ জন পাক সেনা নিহত হয়। আর এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় ঘাটিনা রেলওয়ে ব্রিজে। পাক বাহিনীর একটি গ্রুপ পাবনা হয়ে ঈশ্বরদী রেল স্টেশন থেকে ট্রেনযোগে সিরাজগঞ্জ ঢোকার পরিকল্পনা নেয়। এ গোপন খবরটি ২৩শে এপ্রিল গভীর রাতে সিরাজগঞ্জ পৌঁছালে প্রায় ২০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল উল্লিখিত প্রতিরোধ যুদ্ধের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তারা ঘাটিনা রেল সেতুর পাশে শাহজানপুর গ্রামে এসে অবস্থান নেয়। ২৪শে এপ্রিল বেলা আড়াইটার দিকে শতাধিক পাকসেনা বহনকারী একটি ট্রেন ঈশ্বরদী থেকে সিরাজগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশ্যে এসে দাঁড়ায় ঘাটিনা সেতুর পশ্চিমপাড়ে। ১৫/২০ জন পাকসেনা সেতুর অবস্থা দেখার জন্য যখন নিচে নেমে আসে, ঠিক তখনই মুক্তিযোদ্ধাদের হাতিয়ারগুলো গর্জে ওঠে। নিহত হয় ১৫ জন পাকসেনা।